যে যন্ত্রের সাহায্যে যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয় তাকে জেনেরেটর বলে। এ যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন একটি চুম্বক ক্ষেত্র (Magnetic field) ও আর্মেচার। আর্মেচারের উপরিভাগে ল্যামিনেটেড সিলিকন স্টিলের প্লটে সুপার এনামেল কপার তারের কুণ্ডলি থাকে। আর্মেচারকে চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে ঘুরানো হয়। ফলে ফ্যারাডের সূত্র অনুযায়ী আর্মেচার পরিবাহিতে পরিবর্তি (এসি) ইএমএফ (EMF-Electro Motive Force) তৈরি হয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে আর্মেচারকে ঘুরানো হয় তাকে প্রাইম মুভার বলে। জেনারেটরের কিছু কৌশলগত পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থাৎ জেনারেটরের শ্যাটে কমুটেটর বসিয়ে এসিকে ডিসিতে রূপান্তরিত করা হয়।
জেনারেটর সাধারনত দুই প্রকার
১। এসি জেনারেটর
২। ডিসি জেনারেটর এসি জেনারেটর দুই প্রকার। সিঙ্গেল ফেজ ও থ্রি ফেজ জেনারেটর। ডিসি জেনারেটর বৈশিষ্ট্য দিক বিবেচনা করে দুই প্রকার। যথা-
১) সেলফ এক্সাইটেড জেনারেটর
২) সেপারেটলি এক্সাইটেড জেনারেটর ।
১. সেলক এক্সাইটেড (Self exclted) :
এই ধরনের জেনারেটর এ ফিল্ড কয়েল জেনারেটরে উৎপাদিত কারেন্ট দ্বারা এনারজাইজড হয়। ফিল্ড করেল সংযোগের উপর ভিত্তি করে এই জেনারেটর তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
১) সিরিজ জেনারেটর
২) শান্ট জেনারেটর
৩) কম্পাউন্ড জেনারেটর।
কম্পাউন্ড জেনারেটর আবার সংযোগের উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) সং শান্ট জেনারেটর
২) শর্ট শান্ট জেনারেটর
২. সেপারেটলি এক্সাইটেড (Separately excited)
এই ধরনের জেনারেটর এ ফিল্ড করেল বাহিরের কোন ডিসি সোর্স থেকে এনারজাইজড হয়।
সিরিয়া জেনারেটরঃ যে জেনারেটরের ফিল্ড করেন আর্মেচারের সাথে সিরিজে সংযোগ থাকে, তাকে সিরিজ জেনারেটর বলে।
নান্ট জেনারেটর: যে জেনারেটরের ফিল্ড করেন আর্মেচারের সাথে প্যারালালে সংযোগ থাকে, তাকে শান্ট জেনারেটর বলে।
কম্পাটিক জেনারেটরঃ যে জেনারেটরে দুইটি ফিল্ড কয়েল থাকে, একটি আর্মেচারের সাথে প্যারালালে এবং অন্যটি সিরিজে সংযোগ থাকে, তাকে কম্পাউন্ড জেনারেটর বলে।
শর্ট শার্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর : যে জেনারেটরের আর্মেচারের প্যারালালে শান্ট-ফিল্ড এবং সিরিজ কিন্তু করেল সংযোগ করা হয়, তাকে শর্ট-শার্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর বলে।
লং শাষ্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর : যে জেনারেটরের আর্মেচারের সাথে কিন্তু কয়েন সিরিজে এবং শাষ্ট ফিল্ড কয়েল প্যারালালে সংযোগ করা হয়, তাকে লং-শার্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর বলে।
১. ইয়োক মেশিনের বাইরের আবরণীকে ইরোক বলা হয়। এটি কাষ্ট আয়রন বা স্টিল দারা তৈরি করা হয়। সম্পূর্ন এসেম্বলিকে ধরে রাখে এটি।
২. পোল: লেমিনেটেড সিলিকন ষ্টিলের শিট দ্বারা পোল তৈরি করা হয়। পোল গুলো ইরোকের সাথে বোল্ট দ্বারা যুক্ত করা হয়। পোল এর সাথে ফিল্ড থাকে।
৩. ফিল্ড ওন্যাডিং: ফিল্ড ওয়্যান্ডিং সুপার এনামেল কপার তার যারা তৈরি করা হয়। এগুলো প্রত্যেক পোল এর সাথে পেঁচানো অবস্থায় সিরিজে যুক্ত থাকে।
৪. আর্মেচার কোর: এটি হচ্ছে ডিসি মেশিনের রোটর। এটি দেখতে সিলিন্ডার আকৃতির, অনেকগুলো প্লট দ্বারা তৈরি যা আর্মেচার গুয়ান্ডিংস বহন করে। আর্মেচার পাতলা লেমিনেটেড গোলাকার স্টিলের শিট দিয়ে তৈরি যেন এডি কারেন্ট লস বেশি না হয়।
৫. আর্মেচার অ্যান্ডিং: এটা হচ্ছে পেঁচানো কপার তারের কয়েন যা আর্মেচার প্লটের মধ্যে থাকে। আর্মেচার কন্ডাক্টরগুলো একটা থেকে অন্যটা এবং আর্মেচার কোর থেকে ইন্সুলেটেড থাকে।
৬. কমুটেটর। এটি দেখতে গোলাকৃতি। এর কাজ হলো জেনারেটরে উৎপন্ন অল্টারনেটিং কারেন্ট (এসি) থেকে ডাইরেক্টর কারেন্ট (ডিসি) কনভার্ট করে। ৭. ব্রাশ ব্রাশ কার্বনের তৈরি। এটি মূলত কন্ট্যাক্ট যা লোডে (বহি সার্কিটে) পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।
অবস্থান A. লুপ (কয়েল) যখন A তে অবস্থান করে তখন কোন ইএমএফ তৈরি হয় না অর্থাৎ ইএমএফ = ০ এর কারণ A অবস্থানে লুপ কোন ফ্লাক্স কর্তন করে না। লুপের দুপ্রান্ত ফ্লাক্সের সাথে সমান্তরাল থাকে।
অবস্থান B লুপ (কয়েল) যখন B তে আবস্থান করে তখন লুপের দুপ্রাপ্ত ৯০০ ডিগ্রী ঘুরে। যখন উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু বরাবর আসে কখন সর্বোচ্চ ফ্লাক্স কর্তন করে থাকে এবং জোনারেটরে সর্বোচ্চ ই.এম.এফ উৎপন্ন করে। অবস্থান C এই অবস্থানে লুপের দুপ্রাপ্ত ফ্লাক্সের অর্ধেক থেকে বিপরীতে আরো ৯০ ডিগ্রী অর্থাৎ ১৮০° সামনের দিকে অগ্রসর হয় এবং ইএমএফ আবার শূন্য (০) হয়।
অবস্থান D এই অবস্থানে লুপের দুপ্রান্ত বিপরীত মেরুর দিকে অর্থাৎ যে প্রাপ্ত আগে S পোল ছিলো সেটি এখন N পোলের দিকে এবং যে প্রাপ্ত N পোল ছিলো সেটি এখন S পোলের দিতে থাকবে। ফলে নেগেটিভ দিকে জেনারেটরে সর্বোচ্চ ই.এম.এফ উৎপন্ন করে ।
অবস্থান A. লুপ (করেল) অবস্থানে আবার সেই প্রথম অবস্থায় ফিরে আসবে। এভাবে জেনারেটর এসি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
জেনারেটরের উৎপন্ন ভোল্টেজের দিক নির্ণয় করার জন্য ফ্লেমিংয়ের ডানহাতি নিয়ম অনুসরণ করা হয়। ফ্লেমিংয়ের ডানহাতি নিয়ম : ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী ও মধ্যমাগুলো পরস্পরের সাথে সমকোণে প্রসারিত করলে যদি তর্জনী চুম্বক বলরেখার দিক, বৃদ্ধাঙ্গুলি পরিবাহী তারের ঘূর্ণনের দিক নির্দেশ করে, তবে মধ্যমাগুলো উৎপাদিত ভোল্টেজের দিক নির্দেশ করবে।
এ সূত্র জেনারেটরের উৎপন্ন তড়িৎচালক ফল ও কারেন্টের দিক নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ডিসি জেনারেটরের ফিল্ডের কাজ:
ডিসি জেনারেটরের ফিল্ড ম্যাগনেটিক কয়েল দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে। জেনারেটরে ভোল্টেজ উৎপন্ন করার জন্য যে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স প্রয়োজন হয় তা ফিল্ড কয়েলে উৎপন্ন হয়। এ ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স আর্মেচারকে কাট করলে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় যার ফলে আর্মেচার ঘোরে। ফিল্ড করেলের কারেন্ট কম-বেশি করে উৎপন্ন ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য ভিসি জেনারেটরে ফীল্ডের প্রয়োজন হয়।
ডিসি জেনারেটরের আর্মেচারের কাজ:
ডিসি জেনারেটরের ঘুরন্ত অংশকে আর্মেচার বলে। এ আর্মেচার ম্যাগনেটিক ফিল্ডের মধ্যে ঘোরার ফলে চুম্বক বলরেখাকে কাট করে। ফলে পরিবাহী তারের মধ্যে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়।
ডিসি জেনারেটরের উৎপাদিত ইএমএফ (EMF-Electro Motive Force ) : ভোল্ট
এখানে,
Eg = জেনারেটরের উৎপাদিত ভোল্টেজ, ভোল্টে
= প্রতি পোলের ফ্লাক্স সংখ্যা, ওয়েভারে
Z= আর্মেচার পরিবাহীর সংখ্যা
P = পোল সংখ্যা
A = আর্মেচার প্যারালাল পথের সংখ্যা এবং
N = আর্মেচারের ঘূর্ণন গতিবেগের সংখ্যা।
ল্যাপ ওয়াইন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে A = P অর্থাৎ আর্মেচারে প্যারালাল পথের সংখ্যা ও পোল সংখ্যা সমান। কিন্তু ওয়েভ ওয়াইন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে A = 2 ধরা হয়।
কোনো নির্দিষ্ট জেনারেটরের ক্ষেত্রে এর আর্মেচার কন্ডাক্টর সংখ্যা, পোল ও প্যারালাল পথের সংখ্যা প্রস্তুত কালেই নির্দিষ্ট করা থাকে। পরিচালনার সময় এদের কোনোরূপ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। জেনারেটরের প্রাইমমুভারের ঘূর্ণন গতিবেগ বা চুম্বক ক্ষেত্রের শক্তি পরিবর্তন করে অথবা উভয়ের পরিবর্তন করে উৎপাদিত ভোল্টেজের পরিমাণ কম-বেশি করা যায়।
জেনারেটরের উৎপাদিত ভোল্টেজ এবং টার্মিনাল ভোল্টেজ সমান নয়। উৎপাদিত ভোল্টেজ হতে এর অভ্যড় রীন কিছু ভোল্টেজ ড্রপ বাদ দিয়ে বাকি ভোল্টেজ টার্মিনালে পাওয়া যায়। একে আউটপুট ভোল্টেজ বলে।
জেনারেটরের অভ্যন্তরীন ভোল্টেজ ড্রপ, লোড কারেন্টের উপর নির্ভর করে। ফলে জেনারেটরের লোড কারেন্ট পরিবর্তনের সাথে সাথে টার্মিনাল ভোল্টেজ কম-বেশি হয়।
জেনারেটরের টার্মিনাল ভোল্টেজ প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক মানে রাখার জন্য এবং ফিল্ড সার্কিটের কারেন্ট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফিল্ড রেগুলেটর ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ফিল্ড রেগুলেটর একটি পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স।
ডিসি জেনারেটরের লসসমূহ:
মেশিন যত শক্তি গ্রহণ করে, তত শক্তি লোডে কখনও সরবরাহ করতে পারে না। কারণ, মেশিনে নানাভাবে কিছু না কিছু শক্তির অপচয় হয়। এ অপচয়কে লস বলে। তাই, মেশিনের কর্মদক্ষতা সর্বদা একের চেয়ে কম হয়। মেশিনে যে সমস্ত অপচয় হয় তা নিয়ে দেয়া হলো -
(১) তামার অংশের অপচয়;
(২) লোহার অংশের অপচয়;
(৩) ঘর্ষণ ও হাওয়া কাটার জন্য অপচয়।
ডিসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি
জেনারেটরকে পরিচালনার জন্য যে শক্তি বাইরে থেকে দেয়া হয় তাকে ইনপুট এবং জেনারেটর থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে আউটপুট শক্তি বলে। সুতরাং ডিসি জেনারেটরের উৎপাদিত শক্তি এবং গৃহীত শক্তির অনুপাতকে ডিসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি বা কর্মদক্ষতা বলে। একে 77 চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটিকে ১০০ দ্বারা গুণ করে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
জেনারেটরের গতিবেগ অপরিবর্তিত থাকলেও লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুল লোড ভোল্টেজের পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ টার্মিনাল ভোল্টেজ কমে। এ পরিবর্তন সাধারণত আর্মেচার প্রতিক্রিয়া, আর্মেচার রেজিস্ট্যান্স, আর্মেচার রিয়্যাকট্যান্স ইত্যাদির কারণে হয়ে থাকে। নো-লোড ভোল্টেজ হতে ফুল লোড ভোল্টেজ পার্থক্য করলে যে ভোল্টেজ পাওয়া যায় সে ভোল্টেজের সাথে ফুল-লোড ভোল্টেজের অনুপাতকে জেনারেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশন বলে। এটিকে V.R. দ্বারা সূচিত করা হয়। একে ১০০ দ্বারা গুণ করে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
:. শতকরা (%) V.R =
এখানে,
%V.R. = শতকরা ভোল্টেজ রেগুলেশন
VNL = নো-লোড ভোল্টেজ
VFL = ফুল লোড ভোল্টেজ
এসি জেনারেটর
যে যন্ত্রের সাহায্যে যান্ত্রিক শক্তিকে পরিবর্তিত মানের ভোল্টেজে রূপান্তরিত করা হয়, তাকে এসি জেনারেটর বলে। ডিসি জেনারেটর ও এসি জেনারেটরের উভয়ের মধ্যে পরিবর্তিত ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। ডিসি জেনারেটরে উৎপন্ন এসি ভোল্টেজ কম্যুটেটর ও ব্রাশের মাধ্যমে একমূখী কারেন্ট প্রবাহে রূপান্তরিত করে। আর এসি জেনারেটরে উৎপন্ন এসি ভোল্টেজ স্পি রিংয়ের মাধ্যমে পরিবর্তিত ভোল্টেজ হিসেবে বহিঃবর্তনীতে প্রেরণ করা হয়।
৬.২ এসি জেনারেটরের বিভিন্ন অংশ
এসি জেনারেটরের বিভিন্ন অংশের নাম নিম্নে দেয়া হলো-
(১) আর্মেচার
(২) রোটর:
(৩) প্রাইমমুভার; (৪) এক্সাইটার;
(৫) স্পিরিংঃ
(৬) কার্বন ব্রাশ।
আর্মেচার অল্টারনেটরের স্থির অংশকে আর্মেচার বলে। আর্মচার দেখতে অনেকটা ড্রামের মতো। অল্টারনেটরের উপরের বডি সাধারণত কাস্ট আয়রনের ফ্রেম দ্বারা তৈরি করা হয়। ফ্রেমের কাজ আর্মেচারকে আটকে রাখা।
রোটর অল্টারনেটরের ঘূর্ণীয়মান অংশকে রোটর বা ফিল্ড বলে। রোটর দেখতে অনেকটা ফ্লাই হুইলের মতো। যার ভিতর N pole ও S pole সৃষ্টি করা হয়। উক্ত পোলগুলোতে 125V হতে 250V ডিসি সাপ্লাইয়ের সাহায্যে উত্তেজিত করা হয়।
প্রাইমমুভার: প্রাইমমুভার এমন একটি ইঞ্জিন, যার সাহায্যে অল্টারনেটরের রোটরকে ঘুরানো হয়। প্রাইমমুভার হিসেবে পেট্রোল ইঞ্জিন, ডিজেল ইঞ্জিন, টারবাইন অথবা বৈদ্যুতিক মোটরও ব্যবহার করা হয়।
এক্সাইটার: ডিসি সাপ্লাইয়ের উদ্দেশ্যে অল্টারনেটরের রোটর শ্যাফটের সাথে একটি ডিসি শান্ট জেনারেটর বসানো থাকে, তাকে এক্সাইটার বলে। অল্টারনেটরের ফিল্ড কয়েলকে উত্তেজিত করার জন্য এক্সাইটার ব্যবহার করা হয়।
স্পি রিং: ম্পি রিং পিতলের তৈরি যা কতগুলো সেগমেন্টে বিভক্ত করা থাকে। অল্টারনেটরের রোটরের সাথে দুই বা ততোধিক ম্পি রিং লাগানো থাকে।
কার্বন ব্রাশ: এটি কার্বনের তৈরি। কার্বন ব্রাশ স্লিপ রিংয়ের উপর বসানো থাকে, যার সাহায্যে রোটর ওয়াইন্ডিংকে এক্সাইটেশন করার জন্য ডিসি সাপ্লাই দেয়া হয়।
এসি জেনারেটরের কার্যপদ্ধতি
ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশনের মূলতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এসি জেনারেটর কাজ করে। এসি জেনারেটরে আর্মেচার বা স্টেটর স্থির থাকে। আর ফিল্ড আর্মেচারের মধ্যে ঘোরে। প্রাইমমুভারের সাহায্যে ফিল্ড বা রোটরকে ঘুরালে চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। তখন ফিল্ড কয়েলে ডিসি সাপ্লাই দিলে রোটর ফ্লাক্স আর্মেচার কন্ডাক্টরসমূহকে কাট করে । ফলে ফ্যারাডের ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন নীতি অনুসারে এসি জেনারেটরে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। এ অল্টারনেটিং ভোল্টেজকে স্লিপ রিং ও ব্রাশের সাহায্যে বহিঃবর্তনীতে এনে লোডে সরবরাহ দেয়া হয়। এভাবে এসি জেনারেটর কাজ করে থাকে ।
এসি জেনারেটরে ভোল্টেজ উৎপন্ন করার জন্য ফিল্ড কয়েলে ডিসি সাপ্লাই দেয়াকে ফিল্ড এক্সাইটেশন বলে। রোটরের দুটি স্লিপ রিং ও কার্বন ব্রাশের মাধ্যমে এসি জেনারেটরের ফীল্ডে সাপ্লাই দেয়া হয়।
ফিল্ড এক্সাইটেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি নিম্নে দেয়া হলো-
(ক) কোনো এসি জেনারেটরের রোটর শ্যাফটের সাথে একটি সেলফ এক্সাইটেড শান্ট বা কম্পাউন্ড ডিসি জেনারেটর চালানো হয়। উক্ত জেনারেটরের উৎপাদিত ডিসি ভোল্টেজ এসি জেনারেটরের ফিল্ড এক্সাইটেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(খ) এসি জেনারেটরের উৎপাদিত ভোল্টেজকে রেকটিফায়ারের মাধ্যমে ডিসি করে এসি জেনারেটরের ফিল্ড এক্সাইটেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(গ) ছোট এসি জেনারেটরে ফিল্ডকে স্থির রেখে আর্মেচারকে ঘোরোনো হয় এবং সেক্ষেত্রে ঘুরন্ত আর্মেচার হতে স্লিপ রিং ও ব্রাশের সাহায্যে এসি বৈদ্যুতিক শক্তি পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে এসি ওয়াইন্ডিংয়ের উপর অন্য একটি ছোট ডিসি ওয়াইন্ডিং হয়। স্লিপ রিংয়ের অপর প্রান্তে কম্যুটেটর বসিয়ে তার সাথে ডিসি ওয়াইন্ডিং সংযোগ করা হয়। আর্মেচারের ডিসি ওয়াইন্ডিংয়ে উৎপাদিত ভোল্টেজ কম্যুটেটর ও ব্রাশের সাহায্যে সংগ্রহ করে ফিল্ড এক্সাইটেশন দেয়া হয়।
ল্পি রিং পিতলের তৈরি যা কতগুলো সেগমেন্টে বিভক্ত করা থাকে। অল্টারনেটরের রোটরের সাথে দুই বা ততোধিক স্পি রিং লাগানো থাকে। এসি জেনারেটরে উৎপন্ন অল্টারনেটিং ভোল্টেজকে পি রিংয়ের মাধ্যমে বহিঃবর্তনীতে প্রেরণ করাই স্পি রিংয়ের কাজ।
এসি জেনারেটরের বাইরে থেকে যত শক্তি গ্রহণ করে তত শক্তি লোডে কখনও সরবরাহ করতে পারে না। ফলে এসি জেনারেটরের নানাভাবে কিছু না কিছু শক্তির অপচয় হয়। এ অপচয়কে এসি জেনারেটরের লস বলে। এসি জেনারেটরে যে সমস্ত অপচয় হয় তা নিম্নে দেয়া হলো -
(১) কপার লস
(২) কোর লস;
(৩) ব্রাশ ফ্রিকশন লস ।
(৪) রোটেশন লস;
এসি জেনারেটরকে পরিচালনার জন্য যে শক্তি বাইরে থেকে দেয়া হয় তাকে গৃহীত শক্তি এবং জেনারেটর থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে উৎপাদিত শক্তি বলে। এসি জেনারেটরের উৎপাদিত শক্তি ও গৃহীত শক্তির অনুপাতকে এসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি বা কর্মদক্ষতা বলে। এটিকে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একে ১০০ দ্বারা গুণ করে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
: . কর্মদক্ষতা% =উৎপাদিত শক্তি/গৃহীত শক্তি x ১০০
আরও দেখুন...